অদ্ভুত আবেগ আমার!!



আমি অনেক দুষ্টু একটা চড়ুই পাখি ছিলাম। হঠাৎ করে আবিষ্কার করলাম আমার ভেতরে খুব শান্তশিষ্ট একটা মেয়ে বাসা বেঁধেছে। সেই মেয়েটা রোজ বিকেলে একা একা জানালার ধারে একটা কৃষ্ণচূড়া গাছের সাথে কথা বলে। মাঝে মাঝে জানালার কার্নিশে অচেনা একজন পা ঝুলিয়ে বসে থাকে। একটা ছেলে। আমি তাকে চিনিনা। কখনো দেখিনি। শুধু টের পাই সে খুব আগ্রহ নিয়ে আমার কথা শুনছে।
ছেলেটা হাসিমুখে বসে থাকে। আমি একদিন আবোলতাবোল বকতে বকতে বললাম,আমার খুব ইচ্ছে করছে তোমার পাশে পা ঝুলিয়ে বসে থাকি।
সে সাথে সাথে জানালার ফাঁকে একটা হাত বাড়িয়ে দিল। আমি হাতটা ধরলাম। শক্ত করে। আমার ছোট্ট শরীরটায় যত শক্তি আছে সবটুকু দিয়ে হাতটা জড়িয়ে ধরলাম।
জড়িয়ে ধরতেই আমার মনে হলো সমস্ত বিশ্বব্রক্ষ্মান্ড আমার ভেতর ঢুকে পড়েছে।
গায়ে একশত পাঁচ ডিগ্রি উত্তাপ নিয়ে আমি চুপচাপ তাকিয়ে রইলাম। তার চোখে একটা মানুষ উঁকি দিচ্ছে। মানুষটা কাঙালের মত মমতা নিয়ে আমার গালের উপর লেপ্টে থাকা চুলের গোছা সরিয়ে দিল। বাবা ছাড়া এত মমতা নিয়ে কখনো কোন পুরুষ আমাকে স্পর্শ করেনি।
যে চোখে কামনা নেই,যে ঠোঁটে কামনা নেই শুধু আমাকে সমস্ত পৃথিবী থেকে আড়ালে নিয়ে অপলক চোখে মমতা মিশিয়ে তাকিয়ে থাকার অদম্য ইচ্ছে,
পাথরের মত কঠিন দুহাতে আমার নরম হাত দুটোকে শুধু শক্ত করে আঁকড়ে রাখতে চাওয়া।
আমি তারপর থেকে দুপুরবেলার মরচে ধরা রোদটার জন্য অপেক্ষায় থাকি। এই সময়টায় সে আসে। আমার ঘুম ভাঙিয়ে যায়। সে আসে। প্রতিদিন আসে। আমার ঘুম না ভাঙলে মন খারাপ করে ফিরে যায়।
আমিও অপেক্ষায় থাকি। আমি জানি একদিন সে জানালার কার্নিশটাকে ভালবেসে এই পাঁচতলার বারান্দা থেকে পাখি হয়ে উড়ে গিয়েছিল।
এই জানালাটাকে সে ভালবাসে,এই কৃষ্ণচূড়া গাছটাকে সে আমার মতই গল্প শোনাত।
আমার পড়ার টেবিলটাকে সে হিংসে করে। টেবিলে মাথা রেখে মাঝে মাঝেই আমি ঘুমিয়ে পড়ি। আমি তার একটা ইচ্ছের কথা জানি। আমার পড়ার টেবিলটা একটাদিনের জন্য তার প্রশস্ত বুক হয়ে যেত যদি!
আমরা দুজন জানালার দুপারে থাকি। দুজনের মাঝখানে লোহার গ্রীলটা একটা নদীর মত বয়ে চলে গেছে।
- বিকেল চড়ুই

0 comments:

Post a Comment