অনলাইনে পাসপোর্টের ফর্ম পূরণ করে পাসপোর্ট অফিসে ফর্ম জমা দিয়ে ছবি তুলতে সময় লাগে মাত্র ৩০ মিনিট, তাও কাউকে কোনো ঘুষ দিতে হবে না। আর দালালকেও ধরতে হবে না। শুধু অনলাইনে আবেদন করে আর পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ছবি তুলে হাতের ছাপ দিয়ে আসুন। দেশে ও দেশের বাইরে ইন্টারনেট থেকে এই আবেদন করা যাবে। পাসপোর্ট করতে গেলে অনেক প্রকার ভোগান্তীতে পড়তে হয়।
পাসপোর্ট অফিসে গেলেই দেখা যাচ্ছে পাসপোর্ট প্রত্যাশী কয়েক শ লোক দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। সব সময় দেখা যায় সারা দিন দাঁড়িয়ে থেকেও আবেদন ফরম জমা দিতে পারছেন না। কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই কয়েক দিনের মধ্যে পাসপোর্ট হাতে পাবেন। আসুন আমরা জেনে নেই কিভাবে অনলাইনে পাসপোর্ট করা যায়
প্রথম ধাপ : ব্যাংকে টাকা জমা দেয়া
সোনালী ব্যাংকের কলেজ গেইট শাখায় পাসপোর্ট আবেদনের ফি হিসাবে টাকা জমা দিতে হবে। রেগুলার ফি ৩০০০/- টাকা ( ১ মাসের মধ্যে পাসপোর্ট পেতে হলে) আর ইমারজেন্সি ফি ৬০০০/- টাকা ( ১৫ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পেতে হলে) ।
প্রথমেই টাকা জমা দেয়া প্রয়োজন এই কারণে যে , অনলাইনে ফর্ম পূরণ করার সময় টাকা জমা দেয়ার তারিখ এবং জমাদানের রিসিটের নাম্বার উল্লেখ করার প্রয়োজন হবে। তাই টাকা আগে জমা দেয়া থাকলে একবারেই ফর্ম পূরণ করা হয়ে যাবে।
আমার টিপস -
কলেজ গেইট শাখায় বেশ দ্রুত টাকা জমা দেয়া যায় , কারণ এইখানে ভিড়টা কম । আপনার সুবিধামত ব্রাঞ্চে টাকা জমা দিয়ে রিসিট বুঝে নিন ।
লাইনে দাঁড়ালে ব্যাংকের কাজ শুরুর আগেই ব্যাংকের লোকজন রিসিট দিয়ে যাবে। বা নিজেই টাকা দেয়ার রিসিট সংগ্রহ করে নিন । রিসিট পেলে ইংরেজি ব্লক লেটার স্পষ্টভাবে পূরণ করুন।
সাথে অবশ্যই কলম রাখুন।
( আমি যখন টাকা জমা দিয়েছিলাম , তখন আগারগাঁও ব্রাঞ্চ এ টাকা জমা নিত , এখন খোঁজ নিয়ে দেখলাম সেখানে টাকা জমা নেয়া বন্ধ ! এছাড়া অনলাইনে যেসব ব্রাঞ্চের লিস্টগুলো আছে , তার অনেকগুলোতেই টাকা জমা নেয় না । তাই ঢাকায় থাকলে কলেজ গেইট ব্রাঞ্চেই যাওয়া বেটার)
দ্বিতীয় ধাপ - অনলাইনে ফর্ম পূরণ
মেইল এড্রেস আর মোবাইল নাম্বার দেয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই রেগুলারটা দেবেন।
টাকা জমা দেয়ার তারিখ এবং রিসিট নাম্বার উল্লেখ করুন।
সবশেষে আপনি যেদিন ছবি তোলা ও হাতের ছাপ দেয়ার জন্য বায়োমেট্রিক টেস্ট দিতে যেতে চান, সুবিধামত সেইদিনটা নির্বাচন করে সাবমিট করুন। অর্থ্যাৎ আপনি নিজের পছন্দসই সময়েই যেতে পারছেন ! ব্যাপারটা দারূণ না ?
এবার , রিচেক করুন। দেখুন সব তথ্য ঠিক আছে কিনা।
সবশেষে সাবমিট করুন । সফলভাবে সাবমিশন শেষ হলে পূরণকৃত ফর্মের একটি পিডিএফ কপি আপনার মেইলে চলে আসবে । এইধাপ এইখানেই শেষ।
আমার টিপস – অনলাইনে একাউন্ট খোলার পরপরই আপনাকে ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড জানিয়ে দেবে । সেটা সংরক্ষণ করুন। আর ছবি তোলার জন্য যেদিন সময় দেবেন সেদিনটা ফ্রি রাখবেন। সময় লাগতেও পারে এই দিনে যদি মানুষ বেশী হয় ।
তৃতীয় ধাপ – জমা দেয়ার আগে ফর্মের প্রিন্ট এবং সত্যায়ন
আপনার পূরণকৃত ফর্মের যেই পিডিএফ কপিটা পেয়েছেন, সেটার ২ কপি কালার প্রিন্ট করে ফেলুন। যেসব জায়গা হাতে পূরণ করতে হবে সেগুলো করে ফেলুন । আপনার সাইন দিন।
এবার নিজের চারকপি ছবি , জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এবং পাসপোর্ট ফর্ম নিয়ে পরিচিত কোন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার কাছ থেকে সত্যায়িত করে নিন। পরিচিত কাউকে দিয়ে সসত্যায়ন করানো দরকার এই কারণে যে, ঐ কর্মকর্তার নাম , যোগাযোগ ও ফোন নাম্বার ফর্মে লিখতে হয়।
সত্যায়ন শেষে পুরো ফর্মটি রিচেক করুন।
সত্যায়িত ছবি এবং ব্যাংকের রিসিট আঠা দিয়ে ফর্মের সাথে যুক্ত করুন। সাথে জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপিটি নিন।
আপনার ফর্ম জমা এখন দেয়ার জন্য প্রস্তুত।
আমার টিপস – ফর্মের প্রিন্ট করার সময় এক কপি এক্সট্রা করুন। ব্যাকআপ থাকা ভালো । আমার প্রথম পেজ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। শেষ সময়ে ব্যাকআপ কপির প্রথম পেইজ দিয়ে দিয়েছি।
ছবি দুই কপি লাগলেও এক্সট্রা দুই কপি করিয়ে রাখা ভালো , পাসপোর্ট অফিসে চেয়ে বসে মাঝে মাঝে। একই কথা জাতীয় পরিচয়পত্রের ব্যাপারেও।
চতুর্থ ধাপ – ছবি তোলা এবং অন্যান্য
আপনার নির্বাচন করা তারিখে সকাল সকাল পাসপোর্ট অফিসে চলে যান । অবশ্যই সাদা পোষাক পরবেন না , ফর্মাল পোষাক পরার চেষ্টা করুন।
সকাল ৯ টার দিকে গেলেই হবে। কোন লাইনে দাঁড়াতে হবে না আপনাকে । সরাসরি মেইন গেইট দিয়ে মূল অফিসে যান। সেখানে দায়িত্বরত সেনা সদস্যকে জিজ্ঞেস করুন কোন রুমে যাবেন ।
প্রথমে আপনাকে আটতলায় যেয়ে ফর্ম দেখিয়ে আনতে হবে। খুবই অল্প সময়ের কাজ । ৮০৩ নাম্বার রুম । সিরিয়াল নেবেন।
এবার ৮ তলার থেকে আসতে বলবে ৩ তলায় । সেখানে এসেই আসল কাজ ( আমার ছিল ৩০১ নং রুম)। প্রথমে আপনার ফর্মটি চেক করবে এবং সাইন করে দেবে।
সাইন শেষে আপনাকে জানিয়ে দেয়া হবে ছবি তোলার জন্য কোন রুমে যাবে। ঐ রুমগুলো ঠিক পাশেই। সিরিয়াল আসলে ছবি তুলুন, ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিন। ব্যস , কাজ শেষ !
এবার আপনাকে পাসপোর্ট রিসিভের একটা রিসিট দেবে। সেটা যত্ন করে রাখুন । পুলিশ ভেরিফিকেশান সাপেক্ষে, রিসিট পাওয়ার একমাস বা ১৫ দিনের মধ্যেই আপনি পাসপোর্ট পাবেন ।
আমার টিপস – আবারো বলছি , সাদা পোষাক পরবেন না , ফর্মাল পোষাক পরার চেষ্টা করুন।
আর সাথে জাতীয় পরিচয়পত্রের মূল কপিসহ সত্যায়িত কপিগুলো নিয়ে যান। তিনতলায় যেয়ে সেখানকার সেনাসদস্যের কাছ থেকে দেখিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিন , সব সংযুক্তি ঠিক আছে কিনা।
সাথে অবশ্যই কলম রাখুন।
আঠা, স্ট্যাপলার, এক্সট্রা ছবিও সাথে রাখুন।
আর যারা সরকারী কর্মকর্তা বা শিশুসহ যাচ্ছেন , তাদের কিছু আলাদা কাগজ লাগবে । সেটার জন্য নির্দেশনা দেখুন । কিংবা ৮০৩ এ যোগাযোগ করুন।
পঞ্চম ধাপ – পুলিশ ভেরিফিকেশান ও পাসপোর্ট রিসিভ ডেট ( টিপস সহ)
পুলিশ ভেরিফিকেশানই আমার কাছে ঝামেলার মনে হয়েছে। যদি আপনার স্থায়ী আর বর্তমান ঠিকানা আলাদা হয় , তবে দুই জায়গাতেই আপনার ভেরিফিকেশান হয়ে থাকে। পুলিশের এস বি ( স্পেশাল ব্রাঞ্চ) এই কাজটা করে থাকে।
এবং এইটা করতে যেয়ে পুলিশ বখশিশ হিসাবে টাকা চেয়ে বসে। খুবই ইরিটেটিং একটা ব্যাপার । সেটা ৫০০-১০০০ পর্যন্ত হতে পারে !!!!!
তবে স্ট্রিক্ট থাকলে এটা এড়ানো সম্ভব। আপনি কীভাবে তাদের ফেইস করছেন সেটার উপর নির্ভর করে। সরাসরি বলে দিতে পারেন যে, এইটা আপনার দায়িত্ব, তো টাকা দেয়ার প্রশ্ন কেন। কিংবা বলতে পারেন যে, আপনি ছাত্র , টাকা দেয়া সম্ভব না । ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি !
যাই হোক, ভেরিফিকেশান শেষ হলে আপনার মোবাইলে এস এম এস আসবে। যেদিন এস এম এস আসবে তারপরেই আপনি পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন।
ব্যস, এইবার পাসপোর্ট হাতে নেয়ার পালা।
ষষ্ঠ ধাপ –পাসপোর্ট সংগ্রহ
এইখানে কাজ সহজ । পাসপোর্ট অফিসে চলে যান। লাইনে দাঁড়ান।
সাথে রিসিট আর কলম রাখুন । ৯ টার দিকে গেইট খুলবে। লাইন ধরে প্রবেশ করুন।
রিসিট জমা দিন। অপেক্ষা করুন।
এবার আপনার নাম ডাকবে ।
সাইন করুন , বুঝে নিন আপনার পাসপোর্ট ।
টিপস – হাতে পেয়েই সবার আগে চেক করুন আপনার ইনফোগুলো ঠিক এসেছে কিনা। নিজের এবং পিতামাতার নাম , ঠিকানা এবং অন্যান্যসব তথ্যগুলো মিলিয়ে নিন।
সব ঠিক থাকলে , বলুন ইয়াহুউউউ !
এই হচ্ছে একটি ঝামেলাবিহীন পাসপোর্টের আত্মকাহিনী বা আমি যেভাবে খুব সহজেই পাসপোর্ট পেলাম এর আদ্যোপান্ত । আশা করি কাজে লাগবে।
সবার জন্য শুভকামনা। হ্যাপি পাসপোর্টিং !
সংযুক্তি -
০১) আপনার বর্তমান ঠিকানা যদি ঢাকা হয় , তাহলে এখান থেকেই পাসপোর্ট করতে পারেন । আলাদা করে দেশের বাড়ির জেলা অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না ।
০২) ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার জন্য যে স্লিপ লাগে , সেখানে আলাদা একাউন্ট নম্বরের প্রয়োজন নেই ।নতুন পাসপোর্ট করা বা রিনিউ এর জন্য আলাদা স্লিপই থাকে ।
০৩) GO: Government order
NOC: NO Objection Certificate
PDS: Proof of retired Date
সরকারী, আধাসরকারী, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার স্থায়ী কর্মকর্তা/কর্মচারী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারী চাকুরীজীবীরা এই ঘর পুরণ করবেন। আর কমেন্ট থেকে জানা গেল যে সরকারী কর্মকর্তাদের পাসপোর্ট নীল রঙের । পুলিশ ভেরিফিকেশান এর ঝামেলা নাই ।
০৪ ) এই পোস্ট নিয়মিত আপডেট করা হবে। কারো কাছে নতুন তথ্য থাকলে কমেন্টে জানান দিয়েন প্লিজ । যোগ করে দিব । ধন্যবাদ ।
সোনালী ব্যাংকের কলেজ গেইট শাখায় পাসপোর্ট আবেদনের ফি হিসাবে টাকা জমা দিতে হবে। রেগুলার ফি ৩০০০/- টাকা ( ১ মাসের মধ্যে পাসপোর্ট পেতে হলে) আর ইমারজেন্সি ফি ৬০০০/- টাকা ( ১৫ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পেতে হলে) ।
প্রথমেই টাকা জমা দেয়া প্রয়োজন এই কারণে যে , অনলাইনে ফর্ম পূরণ করার সময় টাকা জমা দেয়ার তারিখ এবং জমাদানের রিসিটের নাম্বার উল্লেখ করার প্রয়োজন হবে। তাই টাকা আগে জমা দেয়া থাকলে একবারেই ফর্ম পূরণ করা হয়ে যাবে।
আমার টিপস -
কলেজ গেইট শাখায় বেশ দ্রুত টাকা জমা দেয়া যায় , কারণ এইখানে ভিড়টা কম । আপনার সুবিধামত ব্রাঞ্চে টাকা জমা দিয়ে রিসিট বুঝে নিন ।
লাইনে দাঁড়ালে ব্যাংকের কাজ শুরুর আগেই ব্যাংকের লোকজন রিসিট দিয়ে যাবে। বা নিজেই টাকা দেয়ার রিসিট সংগ্রহ করে নিন । রিসিট পেলে ইংরেজি ব্লক লেটার স্পষ্টভাবে পূরণ করুন।
সাথে অবশ্যই কলম রাখুন।
( আমি যখন টাকা জমা দিয়েছিলাম , তখন আগারগাঁও ব্রাঞ্চ এ টাকা জমা নিত , এখন খোঁজ নিয়ে দেখলাম সেখানে টাকা জমা নেয়া বন্ধ ! এছাড়া অনলাইনে যেসব ব্রাঞ্চের লিস্টগুলো আছে , তার অনেকগুলোতেই টাকা জমা নেয় না । তাই ঢাকায় থাকলে কলেজ গেইট ব্রাঞ্চেই যাওয়া বেটার)
দ্বিতীয় ধাপ - অনলাইনে ফর্ম পূরণ
( ফরমটি ডাউনলোড করেন এখান থেকে
অনলাইনে ফর্মটি ফিলআপ করুন এবং প্রিন্টআউট নিন।)
অনলাইনে ফরম পূরণের জন্য প্রথমেই যান পাসপোর্ট অফিসের এই সাইটে -http://www.passport.gov.bd/ । নির্দেশনা ভালোভাবে দেখুন , সতর্কতার সাথে একাউন্ট করুন । আপনার নাম ও ব্যক্তিগত তথ্যাদি ( যেমন নামের বানান, প্যারেন্টস এর নাম ) যেন শিক্ষাগত সার্টিফিকেটের মতই হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।অনলাইনে ফর্মটি ফিলআপ করুন এবং প্রিন্টআউট নিন।)
মেইল এড্রেস আর মোবাইল নাম্বার দেয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই রেগুলারটা দেবেন।
টাকা জমা দেয়ার তারিখ এবং রিসিট নাম্বার উল্লেখ করুন।
সবশেষে আপনি যেদিন ছবি তোলা ও হাতের ছাপ দেয়ার জন্য বায়োমেট্রিক টেস্ট দিতে যেতে চান, সুবিধামত সেইদিনটা নির্বাচন করে সাবমিট করুন। অর্থ্যাৎ আপনি নিজের পছন্দসই সময়েই যেতে পারছেন ! ব্যাপারটা দারূণ না ?
এবার , রিচেক করুন। দেখুন সব তথ্য ঠিক আছে কিনা।
সবশেষে সাবমিট করুন । সফলভাবে সাবমিশন শেষ হলে পূরণকৃত ফর্মের একটি পিডিএফ কপি আপনার মেইলে চলে আসবে । এইধাপ এইখানেই শেষ।
আমার টিপস – অনলাইনে একাউন্ট খোলার পরপরই আপনাকে ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড জানিয়ে দেবে । সেটা সংরক্ষণ করুন। আর ছবি তোলার জন্য যেদিন সময় দেবেন সেদিনটা ফ্রি রাখবেন। সময় লাগতেও পারে এই দিনে যদি মানুষ বেশী হয় ।
তৃতীয় ধাপ – জমা দেয়ার আগে ফর্মের প্রিন্ট এবং সত্যায়ন
আপনার পূরণকৃত ফর্মের যেই পিডিএফ কপিটা পেয়েছেন, সেটার ২ কপি কালার প্রিন্ট করে ফেলুন। যেসব জায়গা হাতে পূরণ করতে হবে সেগুলো করে ফেলুন । আপনার সাইন দিন।
এবার নিজের চারকপি ছবি , জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এবং পাসপোর্ট ফর্ম নিয়ে পরিচিত কোন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার কাছ থেকে সত্যায়িত করে নিন। পরিচিত কাউকে দিয়ে সসত্যায়ন করানো দরকার এই কারণে যে, ঐ কর্মকর্তার নাম , যোগাযোগ ও ফোন নাম্বার ফর্মে লিখতে হয়।
সত্যায়ন শেষে পুরো ফর্মটি রিচেক করুন।
সত্যায়িত ছবি এবং ব্যাংকের রিসিট আঠা দিয়ে ফর্মের সাথে যুক্ত করুন। সাথে জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপিটি নিন।
আপনার ফর্ম জমা এখন দেয়ার জন্য প্রস্তুত।
আমার টিপস – ফর্মের প্রিন্ট করার সময় এক কপি এক্সট্রা করুন। ব্যাকআপ থাকা ভালো । আমার প্রথম পেজ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। শেষ সময়ে ব্যাকআপ কপির প্রথম পেইজ দিয়ে দিয়েছি।
ছবি দুই কপি লাগলেও এক্সট্রা দুই কপি করিয়ে রাখা ভালো , পাসপোর্ট অফিসে চেয়ে বসে মাঝে মাঝে। একই কথা জাতীয় পরিচয়পত্রের ব্যাপারেও।
চতুর্থ ধাপ – ছবি তোলা এবং অন্যান্য
আপনার নির্বাচন করা তারিখে সকাল সকাল পাসপোর্ট অফিসে চলে যান । অবশ্যই সাদা পোষাক পরবেন না , ফর্মাল পোষাক পরার চেষ্টা করুন।
সকাল ৯ টার দিকে গেলেই হবে। কোন লাইনে দাঁড়াতে হবে না আপনাকে । সরাসরি মেইন গেইট দিয়ে মূল অফিসে যান। সেখানে দায়িত্বরত সেনা সদস্যকে জিজ্ঞেস করুন কোন রুমে যাবেন ।
প্রথমে আপনাকে আটতলায় যেয়ে ফর্ম দেখিয়ে আনতে হবে। খুবই অল্প সময়ের কাজ । ৮০৩ নাম্বার রুম । সিরিয়াল নেবেন।
এবার ৮ তলার থেকে আসতে বলবে ৩ তলায় । সেখানে এসেই আসল কাজ ( আমার ছিল ৩০১ নং রুম)। প্রথমে আপনার ফর্মটি চেক করবে এবং সাইন করে দেবে।
সাইন শেষে আপনাকে জানিয়ে দেয়া হবে ছবি তোলার জন্য কোন রুমে যাবে। ঐ রুমগুলো ঠিক পাশেই। সিরিয়াল আসলে ছবি তুলুন, ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিন। ব্যস , কাজ শেষ !
এবার আপনাকে পাসপোর্ট রিসিভের একটা রিসিট দেবে। সেটা যত্ন করে রাখুন । পুলিশ ভেরিফিকেশান সাপেক্ষে, রিসিট পাওয়ার একমাস বা ১৫ দিনের মধ্যেই আপনি পাসপোর্ট পাবেন ।
আমার টিপস – আবারো বলছি , সাদা পোষাক পরবেন না , ফর্মাল পোষাক পরার চেষ্টা করুন।
আর সাথে জাতীয় পরিচয়পত্রের মূল কপিসহ সত্যায়িত কপিগুলো নিয়ে যান। তিনতলায় যেয়ে সেখানকার সেনাসদস্যের কাছ থেকে দেখিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিন , সব সংযুক্তি ঠিক আছে কিনা।
সাথে অবশ্যই কলম রাখুন।
আঠা, স্ট্যাপলার, এক্সট্রা ছবিও সাথে রাখুন।
আর যারা সরকারী কর্মকর্তা বা শিশুসহ যাচ্ছেন , তাদের কিছু আলাদা কাগজ লাগবে । সেটার জন্য নির্দেশনা দেখুন । কিংবা ৮০৩ এ যোগাযোগ করুন।
পঞ্চম ধাপ – পুলিশ ভেরিফিকেশান ও পাসপোর্ট রিসিভ ডেট ( টিপস সহ)
পুলিশ ভেরিফিকেশানই আমার কাছে ঝামেলার মনে হয়েছে। যদি আপনার স্থায়ী আর বর্তমান ঠিকানা আলাদা হয় , তবে দুই জায়গাতেই আপনার ভেরিফিকেশান হয়ে থাকে। পুলিশের এস বি ( স্পেশাল ব্রাঞ্চ) এই কাজটা করে থাকে।
এবং এইটা করতে যেয়ে পুলিশ বখশিশ হিসাবে টাকা চেয়ে বসে। খুবই ইরিটেটিং একটা ব্যাপার । সেটা ৫০০-১০০০ পর্যন্ত হতে পারে !!!!!
তবে স্ট্রিক্ট থাকলে এটা এড়ানো সম্ভব। আপনি কীভাবে তাদের ফেইস করছেন সেটার উপর নির্ভর করে। সরাসরি বলে দিতে পারেন যে, এইটা আপনার দায়িত্ব, তো টাকা দেয়ার প্রশ্ন কেন। কিংবা বলতে পারেন যে, আপনি ছাত্র , টাকা দেয়া সম্ভব না । ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি !
যাই হোক, ভেরিফিকেশান শেষ হলে আপনার মোবাইলে এস এম এস আসবে। যেদিন এস এম এস আসবে তারপরেই আপনি পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন।
ব্যস, এইবার পাসপোর্ট হাতে নেয়ার পালা।
ষষ্ঠ ধাপ –পাসপোর্ট সংগ্রহ
এইখানে কাজ সহজ । পাসপোর্ট অফিসে চলে যান। লাইনে দাঁড়ান।
সাথে রিসিট আর কলম রাখুন । ৯ টার দিকে গেইট খুলবে। লাইন ধরে প্রবেশ করুন।
রিসিট জমা দিন। অপেক্ষা করুন।
এবার আপনার নাম ডাকবে ।
সাইন করুন , বুঝে নিন আপনার পাসপোর্ট ।
টিপস – হাতে পেয়েই সবার আগে চেক করুন আপনার ইনফোগুলো ঠিক এসেছে কিনা। নিজের এবং পিতামাতার নাম , ঠিকানা এবং অন্যান্যসব তথ্যগুলো মিলিয়ে নিন।
সব ঠিক থাকলে , বলুন ইয়াহুউউউ !
এই হচ্ছে একটি ঝামেলাবিহীন পাসপোর্টের আত্মকাহিনী বা আমি যেভাবে খুব সহজেই পাসপোর্ট পেলাম এর আদ্যোপান্ত । আশা করি কাজে লাগবে।
সবার জন্য শুভকামনা। হ্যাপি পাসপোর্টিং !
সংযুক্তি -
০১) আপনার বর্তমান ঠিকানা যদি ঢাকা হয় , তাহলে এখান থেকেই পাসপোর্ট করতে পারেন । আলাদা করে দেশের বাড়ির জেলা অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না ।
০২) ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার জন্য যে স্লিপ লাগে , সেখানে আলাদা একাউন্ট নম্বরের প্রয়োজন নেই ।নতুন পাসপোর্ট করা বা রিনিউ এর জন্য আলাদা স্লিপই থাকে ।
০৩) GO: Government order
NOC: NO Objection Certificate
PDS: Proof of retired Date
সরকারী, আধাসরকারী, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার স্থায়ী কর্মকর্তা/কর্মচারী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারী চাকুরীজীবীরা এই ঘর পুরণ করবেন। আর কমেন্ট থেকে জানা গেল যে সরকারী কর্মকর্তাদের পাসপোর্ট নীল রঙের । পুলিশ ভেরিফিকেশান এর ঝামেলা নাই ।
০৪ ) এই পোস্ট নিয়মিত আপডেট করা হবে। কারো কাছে নতুন তথ্য থাকলে কমেন্টে জানান দিয়েন প্লিজ । যোগ করে দিব । ধন্যবাদ ।
মনে রাখবেনঃ
অবশ্যই বাসা থেকে সত্যায়িত করে নিয়ে যাবেন।
NID এর সত্যায়িত ফটোকপি এবং পুরানো পাসপোর্টের (যদি থাকে) ফটোকপি নিয়ে যাবেন। সাদা কাপড় পরে ছবি তোলা যাবে না।
অবশ্যই বাসা থেকে সত্যায়িত করে নিয়ে যাবেন।
NID এর সত্যায়িত ফটোকপি এবং পুরানো পাসপোর্টের (যদি থাকে) ফটোকপি নিয়ে যাবেন। সাদা কাপড় পরে ছবি তোলা যাবে না।
0 comments:
Post a Comment